কোটা সংস্কার আন্দোলন: A Closer Look


A vibrant urban scene featuring a diverse group of young individuals of mixed Asian descent passionately protesting for quota reforms. The image captures their determined expressions and unity as they hold banners adorned with symbolic imagery related to educational reforms. Each person represents different ethnic and cultural backgrounds, showcasing a rich tapestry of diversity.

কোটা সংস্কার আন্দোলন: A Closer Look



আজকের আলোচনায় বিষধভাবে আলোচনা করবো কোটা কি, কোটা সংস্কার আন্দোলন কি, কেন এবং কিভাবে শুরু হয়? আরো আলোচনা করা হবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর সরকারের দালাল বাহিনীর নির্মমতা,নৃসংসতা, অমানবিকতা। আপনি যদি কোটা সংস্কার আন্দোলনের আদ্যোপান্ত জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।


১. কোটা কী?

কোটা বলতে কোনো কিছুর নির্দিষ্ট একটি অংশকে বোঝায় যা সাধারণত একটি গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ থাকে।

মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া বা অনগ্রসর মানুষগুলোকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পড়াশোনা, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে একটু  বাড়তি  সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করাকেই কোটা বলা যেতে পারে।


২. ২০২৪' এর কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মুল দাবী আসলে কি ছিল?

সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা বাতিল করে কেবল ‘অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ’ রেখে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। 

  

৩. বাংলাদেশে কোটা বাতিলের আগ পর্যন্ত কত শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিল

২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাতে ৩০%, জেলাভিত্তিক ১০%, নারী১০%,  ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫%, এবং প্রতিবন্ধী ১%–সহ এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল।

তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চালু হওয়া প্রথম কোটা ব্যবস্থায় এই পরিমাণ ছিল আরও বেশি।


৪. ২০২৪' এর কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন এবং কিভাবে শুরু হল? 

২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে।২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ঐ পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল।


শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন,প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যাঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়। এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। প্রতিবাদে আন্দোলনকারীও তাদের দিকে ইটের টুকরা ছুড়ে ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এইসব ঘটনায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ২০০ জনের অধিক নিহত হন এবং পুলিশ ৫০০ টি মামলা করে ৯,০০০-এর অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে।

উক্ত ঘটনার পর থেকেই  এই কোটা সংস্কার আন্দোলন বেগবান হতে শুরু করে এবং মহামারীতে রুপ নেয়।



৫. সরকারের দালালবাহিনীর নিশ্বংস হত্যাযঙ্ঞের কিছু খন্ড চিত্র

ঢাকার মুগ্ধ হত্যকান্ড

মুগ্ধ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর (বিইউপি) ছাত্র।  সে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল ঢাকার উত্তরা এলাকায়। তার বাসাও উত্তরাতেই। 

যেদিন মুগ্ধ মারা যান, সেদিন রাজধানী ঢাকা ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। সংঘাত ছড়িয়েছিল শহরের অলিগলিতে।


মুগ্ধ যখন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তখন তার কাছাকাছি ছিল বন্ধু জাকিরুল ইসলাম।

মুগ্ধ’র কপালে গুলি লাগার দৃশ্যকে  জাকিরুল ইসলাম  এভাবে বর্ণনা করেন, “গুলি লাগছিলো কপালে, মেয়েরা যেখানে টিপ পরে। ডান কানের পাশ দিয়ে গুলিটা বের হয়ে গেছিলো। গুলি লাগার পর ওর মাথার ঘিলু বের হয়ে গেছিলো। ঘটনাস্থলেই, আমাদের চোখের সামনেই ও মারা গেল।”


বন্ধু জাকিরুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী সেদিন মুগ্ধ সবাইকে পানি খাওয়াচ্ছিলো। তাদের কাছে কোনও ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বা  অন্য কোনোকিছুই ছিল না।


চলুন মুগ্ধের আরেক বন্ধু আশিকের  বিবরন অনুযায়ী মুগ্ধ হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিবরন জেনে নেই। 

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে মি.আশিক লিখেছে যে, সে (আশিক), মুগ্ধ ও তাদের বন্ধু জাকির আন্দোলনের মাঝেই একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রোড ডিভাইডারের ওপর বসেছিল। হঠাৎ তারা দেখল সবাই আমির কমপ্লেক্স আর রাজউক কমার্শিয়ালের ওইদিক থেকে দৌড়ে আসছে। তারা ভেবেছিলো কোনো তাড়াহুড়ো করবে না ধীরগতিতেই উঠে সেখান থেকে অনত্র চলে যাবে।  কিছুক্ষন পর মুগ্ধর পায়ের ওপরে হাত রেখে আশিক বলল, "চল দৌড় দেই।" শেষবারের মতো মুগ্ধও আশিককে বলেছিলো, "চল।"

আশিকের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে জাকির উঠে দৌড় দিলো এবং তারপর আশিক নিজে। কিন্তু তিন থেকে চার কদম যাওয়ার পর আশিক দেখলো তার সামনেই জাকির দৌড়াচ্ছে কিন্তু তার পাশে তার বন্ধু মুগ্ধ নেই। তখন সে দৌড়ানো বন্ধ করে পেছন ঘুরে দেখলো তার বন্ধু  মুগ্ধ ওই বসা অবস্থা থেকেই মাটিতে পড়ে গেছে আর চোখ দুটো বড় করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।  আশিক আরো দেখলো, মুগ্ধর হাতে সেই অবশিষ্ট বিস্কুট, পানির বোতলের পলিথিন আর কপালে গুলির স্পষ্ট চিহ্ন। তখন আশিক চিথকার করে তার আরেক বন্ধু জাকিরকে ডেকে বললো—"জাকির, মুগ্ধ গুলি খাইসে।"



রংপুরের আবু সাইদ হত্যাকান্ড

আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবরপুর গ্রামে।


১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। 


১৬ জুলাইয়ের পুলিশের এই নিশ্বংস হত্যা  ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, আবু সাঈদ আহত হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা আক্তার বলেছেন, "সাঈদকে ‘টার্গেট’ করে হত্যা করা হয়েছে।"

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, "আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার ভিডিও ফুটেজ বিশ্ববাসী দেখেছে। এখন পুলিশ নিজেদের দায় অন্যদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও নষ্ট হবে।"


আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরদিন ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।


পুলিশের এফআইআর এর সমপূর্ন বক্তব্য নিচে দেওয়া হলো

'বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তাঁর নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’

এফআইআরে সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’


সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, "আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। লুকোচুরির কিছু নেই। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়।" কয়েক দিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে পুলিশের মামলার এফআইআরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। 


একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে থাকলে তাঁর কাছে দৌড়ে ছুটে যান সহপাঠীরা। তাঁরা আবু সাঈদকে রিকশায় তুলে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হন।অথচ পুলিশের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।


সরকারের দালাল বাহিনীর (পুলিশ, আর্মি, ছাত্রলীগ) নিশ্বংসতার আরও কিছু দৃশ্য নিচে ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হলো,

ইন্টারনেট স্পিডের সমস্যার কারনে ভিডিও এডিট করা ও পাবলিশ করা সম্ভব হলো না। পরবর্তীতে ইন্টারনেট স্বাভাবিক হয়ে গেলে ভিডিওটি এখানে পাবলিশ করা হবে। ভিডিওটি অনেক গুরুত্বপূর্ন এবং তথ্যবহুল হবে। সবাইকেই ভিডিওটি দেখার অনুরোধ রইলো। 



৬. একটি মর্মান্তিক ঘটনা এবং আমার ব্যক্তিগত মতামত


"ওমা,  মা, ওরা সবাই ভালো আছে? না না কোনো চিন্তার কিছু নেই।  

কোনো সমস্যা নেই দোয়া কইরেন। "


হটাৎ  করে ইন্টারনেটে একটা ভিডিও সামনে আসলো। একটা মুমূর্ষু  শিক্ষার্থীর শেষ আর্তনাদ। সে তার জীবনের শেষ মুহুর্তে তার মায়ের সাথে কথা বলছে। যার জীবনের শেষ মুহূর্তে  তাকেই সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই সে-ই তার মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, মা তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি ভাল আছি।  এই ভিডিওটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে একটা জড়বস্তু মনে হতে লাগল। মনে হল আমার চাইতে বড় অপরাধী এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। নিজেকে জড়বস্তু কেন বললাম নিচের লেখাটা সম্পূর্ণ পড়লে বুঝবেন। তাই একান্ত অনুরোধ জানাচ্ছি সম্পূর্ণ লেখাটা মনোযোগ  সহকারে পড়ার জন্য। 


         এখন বিস্তারিত আলোচনা করব আমি কেন একটা জড় বস্তুু কিংবা এর থেকেও অধম। চলুন আলোচনাটা শুরু করার আগে একটা হাদীস দিয়ে শুরু করি, 

'তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখবে সে যেন তার হাত দিয়ে বাধা দেয় আর যদি হাত দিয়ে বাধা দিতে না পারে তবে যেন মুখ দিয়ে বাধা দেয়,  আর যদি মুখ দিয়ে বাধা দিতে না পারে তাহলে যেন অন্তর দিয়ে বাধা দেয়, আর এটি হলো সবচেয়ে দূর্বল ঈমানের পরিচয়। ' (মুসলিম হা.৪৯)


        উপরোক্ত হাদীসটিতে ঈমানের তিনটি স্তর সপষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে কোনো অন্যায় অথবা জুলুমকে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করাকে ঈমানের সর্বশ্রেষ্ঠ স্তর বলা হয়েছে। কোনো অন্যায়কে মুখ দিয়ে প্রতিরোধ করা বা করার চেষ্টা করাকে মধ্যম স্তর বলা হয়েছে। যদি কারোর হাত অথবা মুখ দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সামর্থ না থাকে সে যেন অন্তর দিয়ে বাধা দেয়,  আর এই অন্তর দিয়ে বাধা দেওয়াকে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর বলা হয়েছে। অন্তর দিয়ে বাধা দেওয়া বলতে এখানে জুলুমকারীর বিরুদ্ধে অন্তত অন্তরে ঘৃনা পোষন করাকে বোঝানো হয়েছে। 


         উক্ত হাদীসটি থেকে একথা স্পষ্ট যে যদি কেউ অন্যায় দেখে সে হাত দিয়ে অথবা মুখ দিয়ে অথবা অন্তরের ঘৃণা পোষনের মাধ্যমে অন্যায় প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে। তাহলে সে একজন ঈমানদ্বার,  একজন মুসলিম। 

আর যদি কেউ কোনো অন্যায় দেখে হাত, মুখ , অথবা অন্তরের ঘৃণা পোষনের মাধ্যমেও অন্যায় প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা না করে তাহলে সে রাসূলের হাদীস অনুযায়ী ঈমানদারই নয়। আর ঈমানদার না হলে মুসলিম হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অর্থাৎ  সে কোনো মুসলিমও নয়। 


        'এখন বলি আমি কেন একটা জড় পদার্থ কিংবা তার থেকেও অধম '

আমার চোখের সামনে আমার ভাইয়ের বুকে গুলি চালানো হলো আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। আমার ভাইকে ট্যাংক চাপা দিয়ে হত্যা করা হলো আমি তখনও চুপই থাকলাম। ছাত্র নামধারী ছাত্রলীগের জানোয়াররা তাদের সহপাঠীদেরকেই মারধর করলো এমনকি হত্যাও করলো তখনও আমি এমন ভাবে দেখলাম যেন কিছুই হয়নি। আরো মনে মনে বললাম যা হচ্ছে হোক,  যে মরছে মরুক, তাতে আমার কি? আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। 

এই ছাত্রলীগ নামের জানোয়ারদের প্রতি অন্তরে অন্তত ঘৃণাও পোষন করতে পারলাম না। এখন আপনারাই বলুন আমি আসলে কি? জড় পদার্থ  বৈ আর কিছুই নই। যেমন জড় পদার্থের কোনো আবেগ অনুভুতি থাকে না আমারও তো কোনো আবেগ অনুভুতি নেই, নিঃস্বাড়। 

কবিতার একটা লাইন মনে পড়ে গেল........... 


           ৷৷  অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,  তবে ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে ।। 

                                                                                                  ' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর '


আসলে কবি গুরু ঠিকই বলেছেন,  অন্যায় যে করে আর যে অন্যায় সহ্য করে কোনো প্রতিবাদ করে না দূজনেই ঘৃণিত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে হাত দিয়ে অথবা মুখ দিয়ে। যদি হাত ও মুখ দিয়ে না পারি অন্তত অন্তরের ঘৃনা পোষনের মাধ্যমে। আর যদি অন্তত অন্তেরের ঘৃণা পোষনের মাধ্যমেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করি তাহলে আমি হবো সর্বনিম্ন স্তরের মুমিন বা সর্বনিম্ন স্তরের মুসলিম। আর যদি তা-ও না করি তাহলে আমি কোনো মুমিন বা মুসলিম নই, আমি একটা নির্জীব জড় বস্তুু বৈ আর কিছুই নই।


লেখার একেবারে শেষে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই সেটা হলো, আমার এই লেখার জন্য কালকে হয়তো আমার বুকের উপরও গুলি চলতে পারে। তখনই প্রমান হয়ে যাবে আমার মতো নির্জীব জড়বস্তু আমাদের এই সমাজে আরও কতগুলো আছে।

 



৭. পরিশেষে

আলোচনার একেবারে শেষ প্রান্তে, আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই মহান শিক্ষক জাহিদুল করিমকে আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে স্বাগত জানাই যিনি তার পদত্যাগের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে তিনি অন্তত একজন সর্বনিম্ন স্তরের মুমিন বা মুসলিম। 



।।।।।।।।।     চলুন ভারতের সেই বীর শিক্ষার্থীদের সাথে সুরে সুর মিলিয়ে আজকের এই আলোচনাটা শেষ করি,

         

                " শেখ হাসিনার অনেকগুন, পুলিশ দিয়ে করছো খুন "

                " মোদীর পোষা হাসিনা তোমায় ভালবাসিনা "

                " আরে আমার টাকায় খায় পরে আমার ভাইরে গুলি করে "

                " আমরা কারা, তোমরা কারা? রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার। 

                " আরে বুকের ভিতর অনেক জ্বোর বুক পেতেছি গুলি কর "

                " আরে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ নাও বুকের উপর ট্যাংক চালাও "



                        " শহীদ ভাই শহীদ বোন থাকবে জারী আন্দোলোন "


        

আমার সকল বন্ধু, বান্ধবী, প্রতিবেশীগণ আপনাদের সকলের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ আপনাদের যার কাছেই এই লেখাটা পৌছাাবে সে যেন এটা বেশি বেশি লাইক শেয়ারের মাধ্যমে অন্তত নিজেকে সর্বনিম্ন স্তরের মুমিন বা মুসলিম হিসাবে প্রমান করেন। আর আমাকেউ একজন সর্বনিম্ন স্তরের মুসলিম হিসাবে প্রমান করার একটা সুযোগ দান করেন। আর কমেন্টে আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানাতে একেবারেই দ্বীধা করবেন না। 

 

              " ও মা, আমরা যদি ঘুমিয়ে থাকি কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে পরে রাত পোহাবে  তবে"



৮. তথ্যসূত্র

বিবিসি, প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া, যুগান্তর ,ইউটিউব।